বিষয়বস্তুতে চলুন

খান মোহাম্মদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খান মোহাম্মদ
১৯৭১ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে খান মোহাম্মদ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
খান মোহাম্মদ
জন্ম(১৯২৮-০১-০১)১ জানুয়ারি ১৯২৮
লাহোর, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৪ জুলাই ২০০৯(2009-07-04) (বয়স ৮১)
লন্ডন, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ )
১৬ অক্টোবর ১৯৫২ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট৩১ মার্চ ১৯৫৮ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৪৭/৪৮পাঞ্জাব
১৯৪৭/৪৮-১৯৪৮/৪৯পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৪৯/৫০পাকিস্তান ইউনিভার্সিটিজ
১৯৫১সমারসেট
১৯৫৩/৫৪বাহাওয়ালপুর
১৯৫৫/৫৬সিন্ধু
১৯৫৬/৫৭করাচি হোয়াইটস
১৯৬০/৬১লাহোর
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৩ ৫৪
রানের সংখ্যা ১০০ ৫৪৪
ব্যাটিং গড় ১০.০০ ১১.৫৭
১০০/৫০ ০/০ ০/১
সর্বোচ্চ রান ২৬* ৯৩
বল করেছে ৩,১৫৭ ১০,৪৯৬
উইকেট ৫৪ ২১৪
বোলিং গড় ২৩.৯২ ২৩.২২
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৬
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/২১ ৭/৫৬
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪/– ২০/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২২ এপ্রিল ২০২০

খান মোহাম্মদ (উর্দু: خان محمد‎‎; জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯২৮ - মৃত্যু: ৪ জুলাই, ২০০৯) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের লাহোর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পাকিস্তানি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৮ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানি ক্রিকেটে বাহাওয়ালপুর, করাচি, লাহোর, উত্তর ভারত, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ও সিন্ধু এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

লাহোরে জন্মগ্রহণকারী খান মোহাম্মদ শহরের ইসলামিয়া কলেজে পড়াশুনো করেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত খান মোহাম্মদের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল।

পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট ক্রিকেটারদের দলের অন্যান্যদের সাথে তার জীবনগাঁথা ভিন্ন ধাঁচের ছিল না। ১৯২৮ সালের নববর্ষের দিনে জন্মগ্রহণকারী খান মোহাম্মদ লাহোরের প্রাচীর ঘেরা কাশ্মিরী গেট এলাকায় শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। চার ভাইয়ের মধ্যে কেবলমাত্র জান মোহাম্মদ ক্রিকেটকে বাইরে রেখে কাঠ ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। লাহোরের সেন্ট্রাল মডেল হাই স্কুলে ক্রিকেট খেলায় উৎসাহিত হন।

ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নিয়ে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেন। দূর্দান্ত বোলিং কৌশল অবলম্বন করে সংশ্লিষ্টদের নজর কাড়েন। পেসে গতি আনয়ণে শারীরিক ভারসাম ও নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং নিখুঁত নিশানা বরাবর বেশ দম নিয়ে বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। তবে, দলের দূর্বল ফিল্ডিংয়ের কারণে ক্যাচ তালুবন্দী না হলেও নাখোশ হতেন না।

১৯ বছর বয়সে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা রঞ্জী ট্রফি খেলার উদ্দেশ্যে উত্তর ভারত ক্রিকেট সংস্থায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনটি আঞ্চলিক খেলায় অংশ নিয়ে ৩৩-এর অধিক গড়ে দশ উইকেট লাভ করেন। ইসলামিয়া কলেজ লাহোরে অধ্যয়নকালে ভারত বিভাজন হলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী দুই মৌসুম পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য হন।

অনানুষ্ঠানিক টেস্টে অংশগ্রহণ

[সম্পাদনা]

নভেম্বর, ১৯৪৮ সালে জন গডার্ডের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল একটিমাত্র অনানুষ্ঠানিক টেস্ট খেলতে আসে। এ পর্যায়ে খান মোহাম্মদকে দলের দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। পাকিস্তানের দলনেতা মিয়া মোহাম্মদ সাঈদ বাগ-ই-জিন্নায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় মুনাওয়ার আলী খান ও ফজল মাহমুদকে দলের বোলিং আক্রমণ পরিচালনার দায়িত্ব দেন। কিন্তু, সিলন গমনে দ্বীপের আবহাওয়ার পূর্ণাঙ্গ সুবিধে নিয়ে বেশ ভালো খেলা উপহার দেন। ইসলামিয়া কলেজের সাবেক সহপাঠী ফজল মাহমুদকে নিয়ে নতুন বলের জুটি গড়েন। দুইটি অনানুষ্ঠানিক টেস্ট খেলায় অংশ নিয়ে চৌদ্দ উইকেট পান ও বোলিং গড়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। এ ধরনের সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তানের দলে স্থায়ী আসন গাড়েন। তবে, আকস্মিকভাবেই অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

আউটের ক্ষেত্রে তিনি বোল্ড ও এলবিডব্লিউকে অধিক প্রাধান্য দেন। ফলশ্রুতিতে, গতিসম্পন্ন পেসার হিসেবে তিনি বিবেচিত হতে থাকেন। তবে নিজের স্বর্ণালী সময়েও তিনি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের চেয়ে বেশি খেলতে পারেননি; কিন্তু ফজল মাহমুদের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রেখেছিলেন।

১৯৫১ সালের গ্রীষ্মকালে সমারসেটের সদস্যরূপে একটি খেলায় অংশ নেন। ইংল্যান্ডে সফররত দক্ষিণ আফ্রিকান একাদশের মুখোমুখি হন।[] খেলায় তিনি পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন। বসবাসের সূত্র ধরে কাউন্টি দলের পক্ষে খেলায় অংশগ্রহণের আগ্রহ ছিল। এ নিয়ম প্রতিপালনে তাকে তিন বছর সেখানে থাকতে হতো। কিন্তু, ১৮ মাস পর পাকিস্তানে টেস্ট ক্রিকেটের সূচনা ঘটলে তিনি ফিরে আসেন।

নাইজেল হাওয়ার্ডের নেতৃত্বাধীন সফররত এমসিসি দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে পাকিস্তান দলে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাগ-ই-জিন্নায় প্রথম অনানুষ্ঠানিক টেস্টে খান মোহাম্মদ প্রথম ইনিংসে পাঁচ-উইকেট পান। ঐ খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। করাচিতে সাত উইকেট পান। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ-উইকেট নিয়ে দলকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন। ঐ সময়ে তিনি পরিষ্কারভাবে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় পেসারের ভূমিকায় ছিলেন। পরবর্তী কয়েক বছর তিনি নিশ্চিতভাবেই খেলা চালিয়ে যেতে পারতেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তেরোটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন খান মোহাম্মদ। অংশগ্রহণকৃত ১৩ টেস্টে উদ্বোধনী বোলার হিসেবে বোলিং করতেন। এ পর্যায়ে তিনি ফজল মাহমুদের সাথে নতুন বল নিয়ে বোলিং আক্রমণে অগ্রসর হতেন। পাকিস্তানের পক্ষে প্রথম বোলিং করার গৌরব অর্জন করেন ও টেস্টে প্রথম উইকেট পান। ১৬ অক্টোবর, ১৯৫২ তারিখে দিল্লিতে স্বাগতিক ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৬ মার্চ, ১৯৫৮ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৫২-৫৩ মৌসুমে ভারতে পাকিস্তানের প্রথম আনুষ্ঠানিক গমনে তাকে রাখা হয়। ১৯৫২ সালে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের উদ্বোধনী টেস্টে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের অন্যতম ছিলেন। ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে একটি গ্রীষ্মকাল অতিবাহিত করার পর খান মোহাম্মদকে সতেরো সদস্যবিশিষ্ট দলে অন্তর্ভুক্ত হন। এ পর্যায়ে তিনি কিছুটা কুঁচকির সমস্যায় নিপতিত হয়েছিলেন। নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম খেলায় পঙ্কজ রায়কে সাত রানে বোল্ড করেন। এরফলে, দেশের প্রথম টেস্ট উইকেট লাভের মর্যাদার অধিকারী হন। কিন্তু প্রথম দিনে বিশ ওভার বোলিং করার পর নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এরফলে, সিরিজের বাদ-বাকী সময় বিশ্রামে থাকেন।

১৯৫৪ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। লর্ডসে অনুষ্ঠিত টেস্টে লেন হাটনকে শূন্য রানে বিদেয় করেন।

ভারতের মুখোমুখি

[সম্পাদনা]

নিজ দেশে ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে প্রথম আনুষ্ঠানিক টেস্ট সিরিজে অংশ নেন। উভয় দলের মধ্যে সর্বাধিক সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। চার টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১৫.৮৬ গড়ে ২২ উইকেট দখল করেন। প্রথম ইনিংসেই অধিক সফল ছিলেন। ঢাকায় ২৬.৫ ওভারে ৪/৪২, বাহাওয়ালপুরের ৫/৭৪, পেশাওয়ারে ৪/৭৯ ও করাচিতে ৫/৭২ পান।

১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬.০০ গড়ে ১৩ উইকেট দখল করেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ম্যাটিং উইকেটে বলকে সুইং করাচ্ছিলেন ও বেশ নিচুতে রাখেন। ১৬.২ ওভারে ৬/২১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০ ওভারে ২/২০ পান। তন্মধ্যে, ১৯ ওভার মেইডেন ছিল। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে নিজ দেশে সর্বশেষ টেস্ট খেলায় অংশ নেন। করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ফজলের সাথে বোলিং অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে ৭/১১২ পান। এরফলে, পাকিস্তান দল খুব সহজেই জয় পায়। তবে, ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে মোটেই ভালো খেলেননি। দুই টেস্টে ৫৪ ওভার বোলিং করে ২৫৯ রান দিয়েও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি।

পাকিস্তান ক্রিকেটকে সংগঠিত করতে প্রয়াস চালান। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যান। সেখানে তিনি মাত্র দুই টেস্টে অংশ নিতে পেরেছিলেন।

১৯৫৪ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড গমনে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে যুক্ত থাকার ফলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খেলায় অংশ নিতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, লর্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্টে ফজল মাহমুদের সাথে বোলিং অপরিবর্তিত অবস্থায় খেলে ৫/৬১ পান।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর এমসিসি’র কোচিং কোর্স সম্পন্ন করেন। খুব শীঘ্রই নিজেকে এ দায়িত্বের উপযোগী করে তোলেন। বিশ বছরের অধিক সময় এমসিসি ইনডোর স্কুলে কোচের দায়িত্বে ছিলেন। অগ্রসরমান স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেট লাভ করে বিশ্বের যে-কোন স্থানে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালনের অধিকার লাভ করেন। ষাট বছর বয়সেও একই দায়িত্ব নিয়ে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও কানাডায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়াও, পশ্চিম লন্ডনের ইলিং এলাকায় ভ্রমণবিষয়ক সংস্থা পরিচালনা করতেন।

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ তারিখে ইসলামাবাদে টেস্ট ক্রিকেট গালার সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পদক লাভ করেন। জীবনের শেষদিকের চার দশক ইংল্যান্ডে বসবাস করেন। অগ্নাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ৪ জুলাই, ২০০৯ তারিখে ৮১ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের লন্ডন এলাকায় খান মোহাম্মদের দেহাবসান ঘটে।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Somerset v South Africans"। www.cricketarchive.com। ১৯৫১-০৮-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৬ 
  2. "Former Pak pacer Khan Mohammad dies"। indopia.in। ২০০৯-০৭-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-০৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]